কোনো একটা অদ্ভুত কারণে এই কলকাতা শহরটা না আমার কাছে এখন আর শুধুমাত্র একটা থাকার বা কাজের জায়গা নয় – একটা অজগর সাপের মতন, বা বলা যায় শীতের দুপুরে লেপের মতন, যত দিন যাচ্ছে- এই শহরটা আমাকে ক্রমশঃ জাপ্টে ধরছে। আসলে ছোটবেলায় আমার ছেলে পেটের ভেতরে ঢুকে যেত আদর খেতে, এই শহরের পেটের ভেতর থেকে ঠিক আমি সেইরকম একটা ওম পাই- আদর আদর গন্ধ পাই। আর সেও বোধহয় বোঝে- ফলে রোজ সে তার পকেট থেকে বের করে নতুন নতুন মাদারির খেলা। পুরোনো গলির পুরোনো বাড়ির পাশ থেকে জন্ম নেই নতুন নতুন চমক। আর আমি আবার আদরে জাপ্টে ধরি …… এই হপ্তাখানেক আগে Devashish da সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েছিলাম Doi খেতে। পেটুক মানুষ তো- কিই বা আর করবো ? তা নাম দেওয়া হয়েছিল Doi-Walk। মানে নামজাদা দইয়ের দোকান দিয়ে শুরু করে ঢুকে যাওয়া আমাদের শহরের পেটে – নতুন নতুন চমক খুঁজবো বলে। অনেকসময় হয় না – প্রায় ভুতুড়ে বাড়ির মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় এক সুন্দরী রাজকন্যের – ব্যাপারটা অনেকটা সেইরকম আর কি……
হাঁটা শুরু হলো হাতিবাগানের সেই মাস্তান “অমৃত” থেকে। সাধারণ গড়পড়তা বাঙালির মতন পৌঁছেছি দেরিতে – আর দেবাশীষ দা যথারীতি প্রচুর চেঁচামেচি শুরু করলেন। যা বুঝলাম, এইরকম একটা খেপাটে event এ আমরা লোক মোটে ৪ জন – অতএব প্রতিটি দোকানেই ১০০-১৫০ grm মিষ্টি দই নিয়ে তার ওপর বিশেষজ্ঞর মতামত আর পন্ডিতি ফলানো – এই হলো কাজ। আর যদি কোনো লুকোনো ওস্তাদের সঙ্গে দেখা হয়েই যায় – দুদণ্ড গপ্পো। তা যাকগে, অমৃত দোকানটি হচ্ছে হাতিবাগানের প্রায় ল্যান্ডমার্ক – আমিনিয়ার পাশে। মানে বিরিয়ানি সাপ্টে ওই ফিরনি বলে যে রাবিশটি দেয়, তাকে হালকা করে কাটিয়ে ঢুকে পড়তে হবে। হতাশ হবেন বলে মনে হয় না – শুধু আগে একটু দেখে নেবেন মিষ্টি দই আছে না নেই। থাকলে মেরে দিন ১০০ গ্রাম। এমন কিছু হাতিঘোড়া নয় – তবে ফেলনাও নয়। অনেকটা মধ্যচল্লিশের সুন্দরী মহিলার মতন – এখনো জানেন না যে সুবর্ণসময় চলে গেছে- কিছু চেংড়া ছোকরার গ্যাস খেয়েই করেন রোজ। বেশি খেয়ে ফেলবেন না আবার – সব যাবে।
উল্টোদিকের গলি দিয়ে হাঁটা লাগান এবার। একটু এগিয়ে ডান কোনায় মতিলাল। সবে বিকেলবেলা – দোকানে ধূপধুনো পড়ছে। আমরা ৪ জন দামড়া ঢুকে ১০০ গ্রাম মিষ্টি দই চাওয়ায় ছেলেটি বোধহয় একটু ভেবলেই গেলো। এমনকি ৩ টি চামচ চাইতেও কিছু বললো না। দোকানের মালিক কিনতু ওস্তাদ মানুষ। ৩ নং জেনারেশন যারা এই দোকান টি চালাচ্ছেন- পাকড়ে ধরলেন। যতই বলি, লিখবো, বিশ্বাস আর হয় না – মহামুশকিল ……. কোনোমতে হাত ছাড়িয়ে দৌড়। ততক্ষনে অলুক্ষুনে বৃষ্টিও একটু চুমু দিয়ে গেছেন আমাদের। দই নিয়ে বিশেষ কিছু বলবো না- উল্টে পড়ার মতন নয় – তবে অনেকের থেকে ভালো।
শাস্ত্রে বলে গেছে চরৈবেতি – অতএব বাঁদিকের গলি নিয়ে আবার হাঁটা। গ্লোব নার্সারীর ওই তাবড় বাড়িটা দেখে বাঙালি হিসাবে একটু গর্ববোধ যে হচ্ছিলনা তা বলবোনা। মাঝখানে দুটি অতীব সাধারণ, অথচ রাবিশ দোকানে ঢুঁ মারা হলো। তাঁদের সবই আছে- ভালো দইটা বাদ দিয়ে – অতীব সাধারণ লাগলো – নাকি ততক্ষনে মুখ মেরে গেছে ? কে জানে ?
ততক্ষনে আমাদের দম প্রায় শেষ – মুখ গেছে মেড়ে – অত মিষ্টি Doi- বাপের জম্মে তো গিলি নি। বিনোদ দা ধরে ঢুকিয়ে ফেললেন একটা নামছাড়া রহস্যময় দোকানে। দেখলাম মালিক খুব মন দিয়ে পাশের রকে বসে প্যাকেট বানাচ্ছেন আর এক বৃদ্ধ কর্মচারী একা কুম্ভর মতো কাউন্টার সামলাচ্ছেন গম্ভীরমুখে। আবার দই। কিনতু এবার রংটা কেমন যেন অন্যরকম। এক চামচ মুছে দিয়েই বুঝলাম মার্ দিয়া কেল্লা – এনার জন্যেই তো এতো কষ্ট- আর এতো বাজে বাজে মুখনষ্ট – ওস্তাদ আমাদের সামনে। মাইরি বলছি, কলকাতা তো ছাড়ুন, অমন চিনিপাতা সাদাদই বাপের জম্মে আমার জিভ ছোঁয় নি। পুরো বাঙালি স্নিগ্ধতা তার প্রতি চামচে – খামোখা আদেখলাপনা নেই, ডালডা দিয়ে বাহুল্য নেই – নিখাদ ভালোবাসা। মালিকের এমন কোনো দায় পড়েনি দোকানের নামকরণের – অনেক খোঁচানোয় খুব বিরক্ত হয়ে কাউন্টার এর কাকু একটি প্যাকেট দেখালেন – ঠিকানা টি পেলাম। এবার আবার যেতে হবে তো ……
ব্যাস, বাঙালির মাথা , একবার ভালো খেয়ে গেছে ঘুরে। কোন কুবুদ্ধিতে কে জানে খোদায় মালুম, তার পরের দোকানে গিয়ে আবার মিষ্টি Doi খেলাম এবং সেই পচা বস্তূ টির স্মৃতি মনে পড়ায় এখনো কেমন গাটা গুলিয়ে উঠলো। বুদ্ধিবিভ্রাট হলে যা হয় আর কি …..
এবার কাজের কথাটা বলি, আমি জানি, এটা পড়ে হয়তো জাস্ট হয়তো কিছু লোকজন Doi কিনতে দৌড়েছেন , কিছু দৌড়েছেন মিষ্টি বানাতে। তা, যদি, বানাতেই হয়, রেসিপিটা আমাকে পাঠালেই হয় , ABP chocochef কম্পেটিশনের জন্যে। বিশদ বিবরণ নিচে রইলো। ছবি চাই না, নাম ফোননম্বর দিয়ে লেখাটা আমাকে email করলেই হবে, বাকি আমি দেখে নেব।
ব্যাস, আজ এই অবধি , আমার শহরের অন্য কলকাতার কোনো গলি নিয়ে হয়তো আবার বকতে বসবো কখনো ……
Bon apetit !!!
Comments and critics welcome …
I can be reached at 9903528225/ indrajit.lahiri@ymail.com
7 comments
Loved the subject, and the language, and the feel! Keep such posts coming. That’s what sets Mohamushkil apart, not the food festival reviews.
Dada, chhobigulo dekha jacche na ektao.. kichu korun plz..
Can you recheck please ? Some problem happened at the blog
[…] Also, if you’re sweet tooth, the strange Doiwalk can be read here […]
[…] Also, if you’re sweet tooth, the strange Doiwalk can be read here […]
Lovely writeup…Khub bhalo laglo pore. besh akta alada subject mone dhorlo besh…
Thanks a lot. Do share for others to read …