ইলিশ নিয়ে বাঙালির বরাবরই একটা কেমন যেন আদেখলামো আছে – মানে ইলিশ না খেলে জীবন বৃথা (অবশ্যই এখানে আমি গোদা ডিমভরা ১ কেজি + মালের কথা বলছি ) . মানে একটি সাধারণ মধ্যবিত্তর জীবনের অনেক অনেক ছোট ছোট না পাওয়া কে ঢেকে দিতে পারে সেই গর্ব যখন বাড়ির কর্তা সাপ্তাহিক বাজারের থেকে এক পিস ইলিশ কেটে নিয়ে বাড়ি ঢোকে। সমস্যাটা হলো আজকাল সাধারণ বাজারে বড়ো Hilsa আর খুব একটা দেখা যায় না, যাও বা পাওয়া যায়, তা হাত লাগানোর মতো নয়, দাম শুনে অন্যের বাড়ির ইয়ের মতো দূর থেকে দেখে শান্তি। বরং সেই খরচে একটা মোটামুটি ভালো জায়গায় গিয়ে গান্ডেপিন্ডে ইলিশ গেলাটা বোধহয় বেশি বুদ্ধির কাজ । যাকগে, অনেক আগডুম বাগডুম বকা হলো, বরং কাজের কথায় আসি। কলকাতার বেশ পুরোনো খানদানি হোটেল হাতেগোনা – তাজ বেঙ্গল তার মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনে ঘুরে বেড়ান চারপেয়ে বাঘ আর ভেতরে দুপেয়ে বাঘ এবং বাঘের বাচ্চারা। তা এহেন জায়গায় সোনারগাঁও রেস্তোরাঁটির বেশ নামডাক রয়েছে খাইয়ে মহলে অনেককাল ধরেই।
আমি যে বহুবার গেছি এমন নয় , বারবার যাবার ক্ষমতাও নেই বিশেষ। তা এবার শিকে ছিঁড়েছে বেড়ালের ভাগ্যে। কোন মাহেন্দ্রক্ষণে কে জানে, আমাহেন ব্লগারেরও নিমন্ত্রণ জুটেছে সেখানে। তো দুপুরবেলা চুলটুল আঁচড়ে , আলমারি থেকে ভালো জামাখানা বের করে পৌঁছে গেলাম সেখানে তাড়াতাড়ি, দেরি হলে শুরু হয়ে গেলে আবার ২-৪ টি পদ বাদ যদি পড়ে ….. গিয়ে দেখি নরক গুলজার , রথি মহারথিদের মেলা , কিন্তু হুঁ হুঁ বাবা , আম্মো আছি , ঠিক টেবিলের পাশে জায়গা দেখে বসে পড়েছি – দেখলাম দু চারটি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখাও হয়ে গেলো – ফলে আড্ডাটা জমেছিলো ভালো।
কিন্তু হঠাৎ একপাত্র আখের রস – ওস্তাদেরা বললেন ওরে কয় ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস – মেরে দিলাম দুগ্গা দুগ্গা করে। তারপরে এক ইয়া বড় থালা দিয়ে গেলেন আমার সামনে , আবার বেশ নকশা করা- বুঝলাম এ আমাদের মানিকতলা বাজারের পাঁচুর দোকান নয়- বেশ ফরমায়েশি জিনিস। তা তার মধ্যে ভাত, পালংশাক , মুগের ডাল আহা তার মধ্যে আবার হালকা করে কড়াইশুঁটি) এবং , জনগণ বুক চেপে বসুন – এই এত্তখানি ইলিশ মাছের তেল আর গোদা একপিস ইলিশ মাছের চাকা ভাজা। হলপ করে বলতে পারি একদম যেন মনে হলো পরের ইস্তিরি সিগন্যাল দিয়েছে। আর কিছু না হলেও শুধু এই দিয়েই আমি একথালা ভাত ওড়াতে পারি , একটু নুন ছিটিয়ে। আর বাড়িতে যেমন ইলিশের তেলটা মেপে পাওয়া যায়, এখানে অনেকখানি – ফলে কোনো চাপ নেই – চালাও পানসি মাঝদরিয়া। এতকিছুর মধ্যেও কাসাব্লাঙ্কার মতোন নিজের জায়গা বাঁচিয়ে রেখেছিলো ডালটি – হালকা করে চামচ দিয়ে মুখে দিলেও গুষ্টিসুখ পাওয়া যাচ্ছিলো – তবে কিনা বাঙালির বরাবরের দুর্বলতা ইলিশ মাছের তেল আর ভাজা – এ বড়ো অসমযুদ্ধ। ও, বলতে ভুলে গেছিলাম, তার আগে ছিল ২ খানি মাছের ডিমের বড়া। ওপরের সর্ষের সসটিকে সন্তর্পনে ছাড়িয়ে ফেলে ছুরি -কাঁটা দিয়ে কেটে মুখে ফেলেছিলাম – আআহ , ইয়ের ইয়ের মতো সুখ পাওয়া গেছিলো।
ব্যাস, তারপর আগামী ঘণ্টাখানেক ধরে কি হলো, অতটা বলতে পারবোনা, ওনারাও বোধয় সমঝদারকে চিনেছিলেন , পাতে পরের পর ইলিশ মাছ পড়ছে আর আমি “বাপি বাড়ি যা” স্টাইলে মারছি। পুরো খাপে খাপ- বল মাঠের বাইরে। ইলিশের টক , তেল ঝোল , বিরিয়ানি (হ্যাঁ , চোখ গোলগোল করার মতো কিছু হয় নি – অচ্ছেদ্দা করবেন না – যথেষ্টই ভালো) – পুরো ঘ্যাম ব্যাপার। বিদেশী সুন্দরীর মতো স্মোকড হিলসাও ছিল , কিন্তু গোলাপের যেমন কাঁটাটা পোষায় না, আমারও এই ডিশে কাঁটা পোষায় না। তাবলে ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ ভাববেন না যেন …… বিদেশির আবেদন কিন্তু তার গায়ের রঙে আর গন্ধে- এখানেও অন্যথা হয় নি
কিন্তু কিন্তু সবার মধ্যেও যেমন আমার বাচ্চা সেরা , এখানেও দেখলাম একটিকে- ইলিশ পাতুরি। কিছু বোদ্ধা বলেন , সুন্দরী মহিলার রাগ আর ইলিশে কাঁটা না থাকলে পৃথিবীর ভালো হবে না। সামনে পেলে হয় খুন করবো, নয় এখানকার ইলিশ পাতুরি টি খাওয়াবো। কলাপাতার শাড়ি খুলে যখন নিরাবরণা তিনি বেরোলেন , কোন কাঁটা ছাড়া পেলব চেহারা – আহা কি বলবো , আনন্দে চোখে জল এসে গেছিলো। পাশের যে ইলিশ বিরিয়ানি এতক্ষন রাজত্ব করছিলেন , তিনিও যেন সরে গেলেন জায়গা দিতে , এমনি সে রূপ। পেটে জায়গা থাকলে আর একপিস তো পাক্কা নামাতাম। এইখানে যদি আসেন, তবে এটিকে ছাড়বেন না , দু পয়সা বেশি হলেও না- মনে রাখবেন, পয়সা দিয়ে পৃথিবীর সব সুখ কেনা যায় না।
শেষের দিকে কি সব মিষ্টি ছিল, ঠিক খেয়াল নেই। ভালো আদর খাওয়ার পর AC চলছে কিনা, সেদিকে যেমন মন না দিলেও চলে , তেমন আমার অবস্থা। পারলে টেনে তুলতে হয়। বাকিরা হয়তো হাসছিলেন আমার অবস্থা দেখে – তাতে আমার ভারী বয়েই গেছে। এতদিনে বুঝলাম বড়ো ইলিশগুলো বাজার থেকে যায় কোথায় – কথা বলে জানলাম ১ কিলো ৫০০ গ্রাম + মাপ না হলে এখানকার ওস্তাদের , থুড়ি শেফের মন ভরে না। ফলে বাড়ির সবাইকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আবার আসছি একদম sure …….
ওহ্হো , আবার জানতে চাইবেন তাই….. এ ব্যাপারটা ৩১ আগস্ট অবধি চলবে সোনারগাঁও রেস্তোরাঁতে – লাঞ্চ ডিনার – দুবেলাই। আমি জানি দাম জিজ্ঞেস করে আপনি লজ্জা দেবেন না – মনে রাখবেন কাঁচা ইলিশও আপনার পাড়ার বাজারে বিশেষ সস্তা নয়।
Bon apetit !!!
Comments and critics welcome.
I can be reached at 9903528225 / indrajit.lahiri@ymail.com
13 comments
Darun lekha hoyechhe . Chaliye jao Bumba da
Thanks sir
Thanks sir
Jame khir
Thanks
Is there a option which can translate instantly to english the food tales you dish out.
I try to write mostly in english, but sadly, I don’t know of anything that can translate my bengali posts ….. Apologies
[…] of Taj Gateway) heads the restaurant and a gem of a person. Under the restaurant exchange program, Sonargaon, Taj Bengal Kolkata has got him and his team from Bangalore and thus launched the Karavalli Food festival in […]
[…] Wasabi, Taj Mumbai is one of the premier Japanese eating joints in the country and thankfully Taj Bengal had brought chef Yousuke Matsudka (a.k.a Joe) from mumbai for Kolkata for a 5 day Japanese […]
[…] when this invitation came from Taj Bengal, to attend their Samvad 2017, I was ready. Tata Steel believes that private enterprise exists not […]
[…] of Taj Gateway) heads the restaurant and a gem of a person. Under the restaurant exchange program, Sonargaon, Taj Bengal Kolkata has got him and his team from Bangalore and thus launched the Karavalli Food festival in […]
[…] Taj Bengal Kolkata […]
[…] You can check my experience for last year’s Hilsa festival at Taj Bengal here […]